আল-আমিন
গাইবান্ধা
প্রশ্ন : পুকুর প্রস্তুতি কীভাবে করব?
উত্তর : পুকুর শুকিয়ে তলদেশের পচা কাদা অপসারণ এবং তলদেশ সমান করতে হবে। পাড় উঁচু করে বাঁধতে হবে। পুকুরের পাড়সহ তলায় চুন ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে প্রতি শতকে ১ কেজি হারে। পুকুরের তলদেশ চাষ দিয়ে আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। ছোট ছিদ্র বিশিষ্ট নাইলন জাল দিয়ে পুকুরের চারপাশে বেড়া (৩ ফুট উঁচু) দিতে হবে। পানি প্রবেশ পথ ও জরুরি পানি নির্গমন পথ করতে হবে এবং তাতে স্ক্রিন বা বানা (বাঁশের পাটা ও নাইলনের জাল) দিতে হবে। চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পরে প্রয়োজনমতো পানি প্রবেশ করিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে ইউরিয়া ১৫০-২০০ গ্রাম/শতক, টিএসপি ৭৫-১০০ গ্রাম/শতক হারে। এরপর ব্লিচিং পাউডার পুকুরে ছিটিয়ে দিয়ে পানি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। অনেক সময় ঘেরের এককোণায় বাঁশের ফ্রেমের সাথে একটি নার্সারি তৈরি করতে বলা হয়। হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা বা গোবর ব্যবহার করা যাবে না।
মো. গুলজার হোসেন
নাটোর
প্রশ্ন : পুকুরে মাছ খাবি খাচ্ছে কী করা যায়?
উত্তর : মাছের ঘনত্ব বেশি থাকলে কমিয়ে দিতে হবে। শতক প্রতি ৪০-৫০টি মাছ। পুকুরের পাড়ের গাছপালা থাকলে ছেটে দিতে হবে। যেন আলো বাতাস বেশি থাকে এবং গাছের পাতা পড়ে পানিতে পচন তৈরি করতে না পারে। পানিতে বুদবুদ উঠতে দেখা গেলে বা পুকুরের তলদেশে গ্যাস হলে হররা টেনে গ্যাস বের করতে হবে। পানিতে অক্সিজেন মেশানোর জন্য বাঁশ, কাঠের ঝাপটা বা পাতিলের সাহায্যে ঢেউ সৃষ্টি করতে হবে। পানি ঢুকানোর সুযোগ থাকলে পানি ঢুকিয়ে পুকুরের পানি বদল করে দিতে হবে।
মো. বেলাল হোসেন
দিনাজপুর
প্রশ্ন : স্ট্রবেরি চাষের জন্য কী ধরনের মাটি সবচেয়ে ভালো।
উত্তর : পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা সম্পন্ন যে কোনো বেলে দো-আঁশ মাটিই স্ট্রবেরি চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। মাটির অম্লমান ৫.৬-৬.৫ স্ট্রবেরি চাষের জন্য উত্তম। স্ট্রবেরি চাষের জন্য মাটিতে জৈব পদার্থ কমপক্ষে ৩% থাকা উচিত। মাটির অম্লমান ৭ এর উপরে হলে শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায়।
মো. আলমগীর হোসেন
পাবনা
প্রশ্ন : পেয়ারার ছাতরা পোকা (মিলিবাগ) আক্রমণ হলে করণীয় কী?
উত্তর : ছাতরা পোকা পেয়ারার একটি অন্যতম ক্ষতিকর পোকা। বিভিন্ন প্রজাতির ছাতরা পোকা পেয়ারা গাছের কচি পাতা, ডগা ও নতুন শাখা-প্রশাখার ক্ষতি করে থাকে। আক্রান্ত গাছে ছাতরা পোকার মধু রস খাওয়ার জন্য পিঁপড়ারা আসে। ছাতরা পোকার বিস্তার ঠেকাতে পিঁপড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১. পোকা দেখামাত্র হাত দ্বারা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
২. প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হবে।
৩. আক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন- ডায়াজিনন ৬০ ইসি, ডারসবান ২০ ইসি, পাইরিফস ২০ ইসি স্প্রে করতে হবে।
রফিকুল ইসলাম
রংপুর
প্রশ্ন : মরিচ গাছের পাতা সরু ও ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। পাতা মোচড়ানো ও নিচের দিকে বেঁকিয়ে যায়। এর কারণ ও প্রতিকার চাই।
উত্তর : মরিচ গাছ বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড় দ্বারা বিভিন্ন সময় আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে মাইট একটি ক্ষতিকর পোকা। এ পোকা গাছ থেকে রস শোষণ করে মরিচের উৎপাদন ও গুণগতমান কমিয়ে দেয়।
প্রতিকার : ১. মরিচ উৎপাদনের জন্য ছায়াযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে।
২. সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে এর আক্রমণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
৩. আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে মাকড়নাশক (যেমন-ওসাইট) স্প্রে করতে হবে। মাইটগুলো সাধারণত পাতার নিচের দিকে থাকে। তাই স্প্রে করার সময় অবশ্যই পাতার নিচে স্প্রে করতে হবে।
নীলমনী দেব
নওগাঁ
প্রশ্ন : ধানের জমিতে আগাছানাশক ব্যবহারের সময় কতটুকু পানি থাকা দরকার।
উত্তর : আগাছানাশকের সাহায্যে আগাছা দমন অধিক সাশ্রয়ী পদ্ধতি। তরল, দানাদার ও পাউডার এ তিন ধরনের আগাছানাশক পাওয়া যায়। তরল ও পাউডার জাতীয় আগাছানাশক পরিমাণমতো পানির সঙ্গে মিশিয়ে এবং দানাদার আগাছানাশক ছিটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করা যায়। দানাদার ও তরল আগাছানাশক দেয়ার সময় জমিতে ২-৩ সেমি. পানি থাকতে হবে। পানির পরিমাণ যদি এক সপ্তাহ রাখা যায় তাহলে সর্বোচ্চ ভালো ফল পাওয়া যাবে।
আল আমিন
গাইবান্ধা
প্রশ্ন : গরু বা ছাগলের ডায়রিয়া হলে কী করব।
উত্তর : এসটিনজেন্ট মিক্সার উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সংগ্রহ করে খাওয়ানো। তাছাড়া ডায়াভেট, ইস্ট্রিনেক্স, ইস্ট্রিনা বা এস্টোভেট ১৫০ গ্রাম পাউডার ১০০ কেজি ওজনের গরু বা ছাগলকে খাওয়ানো যাবে। তিন দিন খাওয়াতে হবে। ছাগল বা গরুর ওজন কম হলে ওষুধের মাত্রাও আনুপাতিক হারে কমিয়ে খাওয়াতে হবে।
মমিনুল ইসলাম
ময়মনসিংহ
প্রশ্ন : গরু ছাগলের নিউমোনিয়ায় কী করণীয়?
উত্তর : এন্টিবায়োটিক স্ট্রেপ্টোপি ১০০ কেজি ওজনের জন্য ২.৫ গ্রাম ৩-৪ দিন এবং মক্সিলিন, ভেট এল এ ১০০ কেজি ওজনের জন্য ১০ মিলি. করে ৩-৪ দিন দিতে হবে।
আক্রান্ত ছাগল অতিদ্রুত অন্যান্য ছাগল হতে আলাদা করে নিতে হবে। আক্রান্ত ছাগলকে স্যাঁতসেঁঁতে স্থান থেকে দূরে রাখতে হবে।
মো. হিরা
দিনাজপুর
প্রশ্ন : পানির রঙ গাঢ় সবুজ, মাছ মরে যাচ্ছে, কী করব?
উত্তর : অতিরিক্ত প্ল্যাংকটন তৈরি হওয়ার কারণে এবং অক্সিজেনের অভাব হলে এমন হয়।
চুন ১ কেজি/শতক হারে গ্রয়োগ করতে হবে। খাবার ও রাসায়নিক সার সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে এবং পানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। তুঁতে ১২-১৪ গ্রাম/শতক হারে ছোট পোঁটলায় বেঁধে ওপর থেকে ১০-১৫ সেমি. নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখলে ভালো হয়। সিলভার কার্প মাছ ছাড়তে হবে।
রুহুল ইমাম
লালমনিরহাট
প্রশ্ন : ভিয়েতনাম কই মাছ চাষের গুরুত্ব ও পোনা মজুদ সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : আমাদের দেশে আবহাওয়া ও জলবায়ু এ মাছ চাষের জন্য উপযোগী। এ মাছ দ্রুত বর্ধনশীল। মাত্র চার মাসে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজন হয়। দেশি কৈ মাছের মতো আকর্ষণীয় সবুজাভ-সোনালি বর্ণের জন্য এ মাছের বাজারমূল্য ও চাহিদা থাই কৈ মাছের চেয়ে অনেক বেশি। এর চাষ ব্যবস্থাপনা সহজ এবং অন্য মাছ চাষের চেয়ে তুলনামূলক লাভ বেশি। থাই কৈ মাছের সঙ্গে শিং ও মাগুর মাছের মিশ্র চাষ করে এর সঙ্গে বাজারজাত করা যায়।
পোনা মজুদ : ০.১৫ থেকে ০.২০ গ্রাম আকারের সুস্থ ও সবল পোনা এককভাবে চাষে প্রতি শতক আয়তনের পুকুরের জন্য ৬০০ থেকে ৮০০টি হারে মজুদ করা যেতে পারে। মজুদের সময় পোনা পুকুরের পানির সঙ্গে খাপ খাইয়ে ছাড়তে হবে।
এছাড়া শিং, মাগুর, রুই, সিলভার কার্প, মৃগেল ও সরপুঁটির সঙ্গে মিশ্র চাষের বেলায় শতাংশপ্রতি কৈ মাছের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কম হবে। এক শতক আয়তনের একটি পুকুরে শিং, মাগুর, রুই ও সিলভার কার্পের মিশ্র চাষে ভিয়েতনাম কৈ ৫০০ থেকে ৬০০, শিং-মাগুর ১০০, রুই ২ ও ৩টি সিলভারকার্পের পোনা থাকতে পারে। পোনা মজুদের সময় কিছু পোনা মারা যায়; তাই ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পোনা বেশি মজুদ করা উচিত।
কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ
* কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল : ০১৫৫২৪৩৫৬৯১